top of page

গোবিন্দলাল চট্টোপাধ্যায়

gobinda chat.jpg

প্রথমেই জানিয়ে রাখি আমার লেখার অভ্যাস নেই বললেই চলে। তবুও সংক্ষেপে চেষ্টা করলাম।জানিনা কতটা পাঠযোগ্য হবে।

              * * * * *

চাকরি করবার ইচ্ছা ছিলোনা  খুব একটা। যৌবনে যখন সবাই চাকরির চেষ্টা করে তখন শাস্ত্রীয় গান বাজনার নেশা এমন ভাবে পেয়ে বসেছিল যে দিনরাত শুধু অভ্যাস করা আর বিখ্যাত শিল্পীদের গানবাজনা শোনা, এসব নিয়েই দিন কেটে যেত।তখনকার দিনে আমার আদর্শ ছিলো বড়ে গুলাম, ফইয়াজ খাঁ, আব্দুল করিম, ভীষ্মদেব, জ্ঞান গোসাঁই, সুনন্দা পট্টনায়ক, নিখিল ব্যানার্জী, আলী আকবর, বিলায়েত খাঁ আরো অনেকে। শীতকালে কলকাতার বিখ্যাত জলসাগুলিতে নিয়মিত হাজিরা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ভেবেছিলাম, গানকে পেশা করলে কেমন হয়। কিন্তু তা যে হওয়ার নয় তা বুঝতে অনেক দেরি হলো।খুব দেরিতে ঘুম ভাঙলো।  এবং ঘুম ভাঙালো আমার দু বছরের ছোট ভাই যে ইতিমধ্যে তিনটে চাকরি ছেড়ে চতুর্থতে যোগ দিয়েছে। ও আমাকে সাহস যোগালো আর গাইড করলো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে। ২০০০ সালে মাত্র ৪২ বছর বয়সে কর্কট রোগে আক্রান্ত  হয়ে সে চলে গেলো চিরতরে স্ত্রী আর এক শিশু কন্যাকে রেখে। সেটা ছিলো খুব বড়ো ধাক্কা আমার জীবনে। ওর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। খুব একা হয়ে পড়েছিলাম সেই সময়ে। কারণ আমরা ভাই হলেও আসলে ছিলাম অভিন্নহৃদয় বন্ধু।

প্রথমে শিক্ষা বিভাগে এল ডি এসিস্টেন্ট পদে কিছুদিন চাকরি করলাম। বছর না ঘুরতেই যখন বোর্ড অফ রেভিনিউ থেকে আমন্ত্রণপত্র পেলাম ট্রেনি কানুনগো হিসাবে চাকরি র তখন ওখানকার সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই নিরুৎসাহিত করে বলেছিলেন মহাকরণে থেকে যেতে কারণ ওখানে না কি পদোন্নতির সুযোগ অনেক বেশি। আর কানুনগোর চাকরিতে ঝক্কি ঝামেলাও অনেক, এসবও আমাকে বললো ওখানকার অভিজ্ঞ দাদারা। মাঠে ঘাটে কাজ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হবে- এমন অনেক নেতিবাচক কথা শুনে কিছুটা দ্বন্দ্বের মধ্যে পরে গেলাম। কয়েকদিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ১৯৭৯র ফেব্রুয়ারী তে মেদিনীপুরে চলে গেলাম ট্রেনি কানুনগো হিসাবে জয়েন করতে। ওখানে  ছয় মাস ট্রেনিং চলাকালীন নতুন করে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো কয়েকজনের সাথে। বিশেষ করে দীপক চক্রবর্তী, গৌতম মুখার্জী এবং আরো কয়েকজনের সান্নিধ্য কখনো ভুলতে পারবোনা। খুব কষ্ট হয় ভাবলে গৌতম আর আমাদের মধ্যে নেই। ট্রেনিং পর্বে কিস্তোয়ার শিখতে  শিখতে দীপকের গান লেখা আর সেই গানে সুর দিয়ে গাওয়া - সে সব দিনগুলোর স্মৃতি বড়ই মধুর। যথাসময়ে ট্রেনিং পর্ব শেষ হয়ে গেলো। এবারে বিচ্ছিন্ন হবার পালা। যদিও প্রথমে আমার আরো অনেকের সাথে মেদিনীপুর এ পোস্টিং হয়েছিল। কিন্তু একটা বিশেষ পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে একটু কাছের কোনো জেলাতে পোস্টিং দেবার জন্য। পরিস্থিতিটা ছিলো একান্তই পারিবারিক। যাই হোক আমার নতুন আদেশ বেরোলো হাওড়া-হুগলী-নদীয়া সেটেলমেন্ট অপারেশন এ চুঁচুড়া তে যোগ দেবার। অতঃপর নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর চার্জ অফিসের আদেশানুসারে হাঁসখালি সার্কল অফিস যা বগুলা রেল স্টেশনের নিকটে অবস্থিত। সোদপুর থেকে গেদে লোকাল এ বগুলা স্টেশনে নেমে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই স্টেশনের অদূরে সার্কল অফিস আবিষ্কার করা গেলো। প্রথম দিন। মনে প্রবল  উৎসাহ নিয়ে উপস্থিত হলাম সার্কল অফিসে। সার্কল অফিসার সত্যরঞ্জন বাবুর (পদবি মনে পড়ছেনা) সাথে দেখা করলে তিনি প্রাথমিক পরিচয় পর্ব সেরে ওই সার্কল এর জমি রেকর্ড সংক্রান্ত বেশ কিছু কাগজপত্র, ফাইল, আর ও আর আমাকে পড়বার জন্য দিলেন। ওখানে তখন খানাপুরীর কাজ প্রায় শেষ। তিনজন কানুনগো 51A(1)এর শুনানি নিচ্ছেন। আমাকে বললেন বেশ কয়েকটা বর্গা দরখাস্ত পড়ে আছে। সেগুলো সরেজমিন তদন্ত করে শুনানি শেষ করতে এবং একই সাথে 51A(1) এর শুনানি করতে। বর্গা শুনানি শেষ হওয়া কয়েকটি ফাইল এগিয়ে দিয়ে পড়ে নিতে বললেন বুঝে নেওয়ার জন্য, কিভাবে তদন্ত করতে হয়, আদেশ লিখতে হয় ইত্যাদি। অতঃপর পাশের অন্য একটা বাড়িতে যেখানে শুনানি চলছিল সেখানে গেলাম। তিনজন কানুনগো সাহেব তখন হিয়ারিং করছিলেন। অসীম ব্যানার্জী, বুদ্ধদেব চ্যাটার্জী, জিতেন মহত্তম রায়। এদের সবার সাথে পরিচয় আর শুভেচ্ছা বিনিময় হবার পরে মনটা বেশ হালকা হলো। দেখলাম ওদেরও আমাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে অসুবিধা হলোনা আমি চাকরিতে  নতুন হওয়া সত্ত্বেও। ওরা  বারাকপুর, ইছাপুর ইত্যাদি স্থান থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে অফিস করতেন। আমাকে যেহেতু সার্কল অফিসার বলেছিলেন  ওখানে অবস্থান করে অফিস করতে, আমি ওই অফিসের একজন গ্ৰুপ ডি স্টাফ প্রদীপ সাহার অনুগ্রহে তার বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকতে শুরু করলাম। সপ্তাহান্তে বাড়িতে আসতাম। বর্গা তদন্ত ও নোটিস জারি ইত্যাদি কাজের জন্য আমার সাথে একজন আমীনবাবু, ভক্ত মন্ডল ও একজন গ্ৰুপ ডি কর্মচারী জুড়ে দেওয়া হলো। কয়েকটি নোটিশ লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হলো সরেজমিন তদন্ত ও শুনানির তারিখ সময় জানিয়ে। বর্গা রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে কিছুটা শোনা থাকলেও হাতে  কলমে এমন একটা কাজের দায়িত্ব  পেয়ে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম। তবে একই সাথে গ্রামের সাধারণ কৃষিজীবী মানুষের আর্থ সামাজিক দিক সম্বন্ধে অবহিত হয়েছিলাম জীবনে প্রথমবারের জন্য।চাকরিজীবনে এইভাবেই আমার ভূমি বিভাগে কর্মজীবন শুরু। হাঁসখালি তে প্রায় বছরখানেক মতো থাকার পরে আমার প্রথম হলকা পোস্টিং হয়েছিল রানাঘাট থানার অন্তর্গত পশ্চিম নোয়াপাড়া হলকা ক্যাম্প এ। সেটা ছিলো রানাঘাট এর পশ্চিম প্রান্তে গঙ্গা তীরবর্তী স্থান। গঙ্গা পেরোলেই বলাগড়। ওখানেই আমার প্রথম মেস জীবন শুরু দুজন আমিন আর একজন চেনম্যান অভিমন্যু দাস কে নিয়ে। সকাল আটটা থেকে  দুপুর একটা পর্যন্ত কেবি করে গঙ্গাস্নান করে ঘরে ফিরে স্টোভে রান্না করে খাওয়া।এরপরে বিভিন্ন জেলায় একের পরে এক চাকরির স্থান পাল্টেছে আর নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সাথে পরিচয়, সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হয়েছি। তাদের মধ্যে যেমন ছিলো সহকর্মী, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষ যাদের সাথে কাজের সূত্রে প্রত্যক্ষ পরিচয়। আর গ্রামের সাধারণ মানুষের হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসাও কম পাইনি একথা না বলে পারছিনা। আর পেয়েছিলাম আমাদের প্রিয় সমিতির অসংখ্য বন্ধু, দাদা যাদের অনেকের সাথে আজও হৃদয়ের যোগাযোগ রয়েছে। 

একদিন যে চাকরিতে যোগ দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, অবসর শেষে হিসাব করে দেখছি সেই চাকরি আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। 

আমার নাম : গোবিন্দ চ্যাটার্জী 

বাসস্থান : নাটাগড়, সোদপুর 

 কানুনগো চাকরিতে প্রবেশের তারিখ : ০৭/০৯/১৯৭৯

 অবসরের তারিখ : ৩১/০৮/২০১২

অবসর :  ক্যানিং মহকুমা শাসকের করণ থেকে ডিএমডিসি হিসাবে।

মোবাইল : 9874665945

সংযোগসূত্র সার্ভে টিম

ফিল্ড ইন্সট্রাক্টরঃ বৈদ্যনাথ সেনগুপ্ত

ফিল্ডবুক রাইটারঃ সমীর ভট্টাচার্য

ফিল্ড সুপারভাইজারঃ রামচন্দ্র ঘোষ ও আশীষ সরকার

bottom of page