সংযোগসূত্র
আর জি কর কান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত প্রতিকার চাইছি
দেবীদাস ব্যানার্জী

বর্তমান বাসস্থানঃ পটুয়াটোলা লেন, গোলদীঘি, কলকাতা
চাকরিতে যোগদানঃ ২০/০১/১৯৮১, মালদহ
অবসরঃ ৩১/১২/২০১২ এস ডি এল এল আর ও, আলিপুর, সদর।
কানুনগো কথা
ইউ টি তকমা ব্যতিত পূর্ণ কানু রূপে আমি ২০/১/১৯৮১তে তত্কালীন মালদা পশ্চিম দিনাজপুর আর এস ও তে যোগ দিয়েছিলাম। সেখান থেকে ভায়া রথবাড়ি চার্জ অফিস ও কালিয়াচক সার্কেল হয়ে মোথাবাড়ি হল্কা।
কালিয়াচকে ফণী দত্ত মশাই এর বাড়ীতে একটা ঘরে মেস করে থাকতো কমলেশ দাস ও অচিন্ত্য দাস। ওদের সাথে দুই দিন কাটিয়ে সোজা মোথা বাড়িতে। ওখানে জামসেদ আলী সাহেবের একটি বাড়িতে দোতলায় তিন টি ঘর নিয়ে একটি মেসে।ঐ মেসে থাকতেন এস ই বি র একজন এস এস,গৌড় গ্রামীণ ব্যাংকের একজন এবং দুজন আমার সমবয়সী কানুভাই পিনাক সেন ও শিলাদিত্য গুপ্ত।
এবার যথারীতি কে বি করার উদ্যোগ এবং অপারেশন বর্গা। ঐ হল্কা য় প্রায় অধিকাংশ মৌজার কেবি শেষের পথে , আমার কেবি করার সুযোগ ঘটে ছিল আড়াই খানা মৌজার একটি রাস্তা র প্যাচ্ কিস্তোয়ার সহ। ইতিমধ্যে কালিয়াচকে যোগ দিয়েছে প্রণব ভট্টাচার্য। সত্যি কথা বলতে কি এই অফিসের আমার কাছে একটু বেমানান লাগত। কারণ ইতিপূর্বে আমি একটি কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসে (GSI) অনিয়মিত তৃতীয় শ্রেণীর পদে কাজ করতাম। সেই চাকরি পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল তত্কালীন কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের পাঠানো নামে যথারীতি পরিক্ষা ও ইন্টার ভিউ র পর। ঐ অফিসে আমাদের এখানকার এক সহকর্মী বন্ধু প্রয়াত গৌতম মুখার্জি ও ছিল। ঐ দপ্তরে আমরা যোগ দিয়েছিলাম ১৫/১০/১৯৭৫এ।
মোথাবাড়ি হল্কা র প্রায় কেবির কাজ শেষে বদলির আদেশ হলো, পিনাক চাচলে কমলেশ সম্পাদক হিসেবে জেলা সদরে আমি হরিশ্চন্দ্র পুর, মনিদা মানে মনিমহোন গায়েন চার্জ অফিস,শিব প্রসন্ন রায় পঞ্চানন্দপুর প্রণব কালিয়াচক ইত্যাদি।
আমি ও পিনাক ঠিক করলাম হয় হরিশ্চন্দ্র পুর অথবা চাচল এক জায়গায় দুজনে থাকব। চাচল তূলনামূলক ভালো জায়গা বলে ওটাই ঠিক হল।সমস্যা দেখা দিল ঘর পাওয়া নিয়ে কেউই আইবুড়ো ছেলেদের ভাড়া দিতে রাজি না। একসময় চাচল সেন্ট্রালাইজড ক্যাম্প এর বড় বাবু বলেই ফেললেন স্যার শশুর বাড়ি দিতে একাধিক জন রাজি কিন্তু ভাড়া দিতে নারাজ। অগত্যা অফিস বাড়ির চিলে কোঠার ঘরে সাময়িক আশ্রয়। পরে পাট হাটে র কাছে একটা বাড়িতে।
হরিশ্চন্দ্র পুর ও চাচল দুটোই ছিল সেন্ট্রালাইজড ক্যাম্প। হরিশ্চন্দ্র পুরে ওসি স্বপন দা আর চাচলে গোপাল দা। আমি বাসে হরিশ্চন্দ্র পুর থেকে আসা যাওয়া করি। এই রকম একদিন সন্ধ্যায় বাস থেকে নেমে দেখি পিনাক ও ঐ অফিসের নৈশপ্রহরী চিন্তিত হয়ে কথাবার্তা বলছে। কাছে গিয়ে জানতে পারলাম গোপাল দা কয়েকটি মৌজার খা খা সিট নিয়ে সাতসকালে বর্গা তদন্তে গেছেন এখনো পর্যন্ত ফেরেননি। ওনার বাড়িতে সকলে চিন্তিত কান্না কাটি করছে। আমি ও দ্রুত ব্যগ রেখে ওদের সঙ্গে ওনার বাড়িতে গিয়ে দেখি মাসিমা কাঁদছেন আর বলছেন "সেই বিহানে পোলাডা বার হইসে এহনো ফেরে নাই।" বৌদি ও চিন্তিত আর এই সব দেখে ছোট্ট মোনালিসা পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আমরা বললাম দেখছি চিন্তা করবেন না বললাম তো কিন্তু খুঁজতে কোথায় কি করে যাব। তখন মুঠোফোন দুরস্ত ল্যান্ড ফোন ও দূর্লভ। অগত্যা ঠিক করলাম আর কিছু দেখে বিডিও সাহেব কে জানাতে হবে। বলে টর্চ হাতে নিয়ে এন বি এস টি সির গ্যারেজ ছাড়িয়ে মালতীপুরের দিকে এগোতেই চোখে পড়ল উল্টো দিক থেকে তিনজন লোক সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে এদিকে আসছে। মনে একটু আশা জাগল, হাঁ আর কিছু টা এগোতেই গোপাল দা আমাদের দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন," আরে সেন বাবু দেবীবাবু দেখেন কি পাইসি"। বলে ই সাইকেলের ঝোলানো ব্যাগ থেকে কিছু পোড়া মাটির পূরাতন জিনিস পত্র বের করলেন। আমরা বললাম এখন বাড়িতে চলুন এগুলো পরে দেখা যাবে বাড়িতে সবাই চিন্তা করছেন। বলে একরকম জোর করেই ওনাকে বাড়িতে পাঠালাম। গোপাল দা এই গুলো নিয়ে অনেক চিঠিপত্র করে আর্কিওলজিকাল বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এবং কিছু খনন কাজ করে আরো কিছু নিদর্শন মেলে। এই নিয়ে গোপাল দা প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন লোক রঞ্জন শাখা থেকে সম্প্রতি পেলেন স্বর্ণপদক দিনেশ চন্দ্র সেন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক। আজ এই পর্যন্তই।
আমি অবসর নিয়েছি আলিপুর সদর মহকুমা ভুমি ও ভুমি সংস্কার আধিকারিক পদ থেকে বিগত ৩১/১২/২০১২ তারিখে।
থাকি কোলকাতায় গোল দিঘির আশেপাশে পটুয়াটোলা লেনে।