top of page

বিশ্বনাথ পাল

biswanath pal.jpg

বর্তমান বাসস্থানঃ বোলপুর সাতের পল্লী, বীরভূম

চাকরিতে যোগদানঃ ০২/০৪/১৯৭৪ সেটেলমেন্ট অফিস, মেদিনীপুর

চাকরি থেকে অবসরঃ প্রজেক্ট ডায়রেক্টর, ডি আর ডি সি বীরভূম

​মোবাইল নং ৮১১৬৯৪৯৭৭৩

কানুনগোস্মৃতি

আমার প্রথম হল্কা ক্যাম্প মেদিনীপুরের শালবনী থানার পীরাকাটায়। ক্যাম্প টি মাটির বাড়ি খড়ের ছাউনী। পরে বর্ষার সময় দেখা গেল মেঝের  নরম মাটি তে  লোহার ফোল্ডিং চেয়ারে বসলেই তার চারটে সরু পা গ্রাউন্ড ফ্লোর লেবেল থেকে দু তিন ইঞ্চি অবলীলাক্রমে নিচে প্রবেশ করে যেতো, ফলতঃ আমার অবস্থান ও টেবিল লেবেল থেকে সমভাবে নিচু হয়ে যেত ।আর house owner একটা চাটাই ঘেরা urinal বানিয়ে দিয়েছিল।মেস টা ক্যাম্প থেকে কাছেই ছিল,সেটাই ছিল খাটিয়া পেতে থাকার বাড়ি,তবে সেথায় চা টিফিন পাওয়া যেত না।KB করতে যাওয়ার পথে সুদর্শন নাগের রেস্টুরেন্টে (অ্যাসবেস্টাস ছাউনী) বেঞ্চে বসে মুড়ি বন্দে খেয়ে পরে চা পান।                     

 

এইবার প্রথম মৌজায় KB করতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল সেটা র অভিজ্ঞতা একটু বলি। আমার মনে হয় প্রথম মৌজায় KB করতে গিয়ে প্রায় সব কানুনগো দাদা বন্ধু দের একই অবস্থা হয়েছিল যার অভিজ্ঞতা সব বিচিত্র বিচিত্র। আমার প্রথম মৌজা কোটালবেরা (86)।যথারীতি বদর আমিন,পেশকার(দুজনেই expert) আর চেনম্যান (যার কাঁধ,দুহাত ভর্তি ২০ ফুট লগা সহ)বাহিনী নিয়ে via Nag Restaurant সকাল আটটা নাগাদ মৌজার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।পৌঁছে টেবিল সেট করলাম।এরপর একটা চেইনলাইন partal ,কিছু কিছু কাটান মিলল,কিছু মিলল না, যাই হোক আমি ম্যাপে 80%কাটান মিলল লিখে sheet is passed for KB work লিখে দিলাম। টেবিলে মৌজা ভলিউম,আমার হাতে সবুজ কালির কলম।দাগ নং ১ নদী সবুজ টিক চিহ্ন দিয়ে সহজেই KB হয়ে গেল।এবার দাগ নং ২  এবার টেবিলের ওপর পড়ল ৩০ - ৩৫ পাতার  Civil Court এর TS কেসের রায়।ওটা দেখেই আমার মাথা ঘুরতে লাগল, এপিঠওপিঠ উল্টে পাল্টে কিছুই বুঝতে পারলাম না।কৌশলী আমিন পেশকার কিছু ইঙ্গিত দিতেই আমি রায়ত কে বলে দিলাম এটা দেখতে সময় লাগবে,আপনি দুদিন পরে  আসবেন।এরপর পরের দাগ গুলি আস্তে আস্তে করে চলতে থাকলো।সোজা অঙ্কে সমস্যা হয় নাই,কঠিন কঠিন অঙ্কের সময় কৌশলী আমিন পেশকার আমাকে দিয়ে এমনভাবে KB করিয়ে দিচ্ছেন   যাতে public আমার অনভিজ্ঞতা বুঝতে না পারে।আসলে ট্রেনিং এ তো এসব হাতে কলমে করিনি,সকালে চেন টেনে বেড়িয়েছি,আর বিকালে ক্লাস।দলিল,ওয়ারিশ ইত্যাদি আমার ঐ সহকর্মীরাই হিসেব করেছেন আর আমি সবুজায়ন করেছি।এদিকে বেলা সাড়ে ১১টা,তখন দেখছি উপস্থিত মানুষজন আমাদের টিফিন খাওয়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।ওখানে কিনতে চাইলে ও পাবে না,তাই অগত্যা চিড়ে ভিজিয়ে  চিনি বা গুর মাখিয়ে খাওয়া,ওখানে তখন চামচের  বালাই নেই,হাত ধুয়ে হাত দিয়ে খেলাম - তবে ওদের আন্তরিকতার  কোনো অভাব ছিল না।এরমধ্যে  আমার তলপেটের ব্লাডার ভর্তি, ঐ জল ত্যাগ করার জন্য কাছাকাছি কোনো ঝোপ জঙ্গল নেই,শুধু ফাঁকা মাঠ,অগত্যা অনেকটাই দূরে গিয়ে ব্লাডার খালি করে এলাম।এরমধ্যে আমার দল খসড়া লেখা,কিছু দলিল হিসেব করে রেখেছিলেন,সেগুলোর KB করে ফেললাম।আসলে প্রথম দিনের পুরো কাজটার আড়ালে ছিল ওই দুজনের  guidance - ওনাদের কাছেই আমরা কাজ শিখেছিলাম।মাঝে একটা ছোট্ট ঘটনা - রায়তদের মধ্যে একটা অংশ আমার জন্য একজনকে সিগারেট কিনতে পাঠিয়েছেন,ফিরে এসে তার মন্তব্য "কাগজ পালি নাই,পাতা লিয়ে এলম" মানে সিগারেট পায় নাই, বিড়ি নিয়ে এসেছে। তবে প্রথম দিন কোনো political pressure দেখিনি।কাজ শেষে ফিরলাম দুটোর সময়। দুপুরের খাওয়া সেরে কিছুক্ষণ পরে আবার ক্যাম্পে।মাথায় ঘুরছে ঐ TS case, পাতার পর পাতা পড়ে যাচ্ছি কিন্তু কিছুই মাথায় ঢুকল না ,শেষে স্থির করলাম C O র কাছে যাবো পরের দিন। স্টাফেরা যাদের দূরে বাড়ি তারা ক্যাম্পেই থাকত,কাছাকাছি কোনো জলের source ছিল না,দূরে পুকুর,দূরে র কুয়ো থেকে খাবার জল। মেসে যে কুয়োর জলে স্নান করতাম সেই কুয়োর জল ই মাটির কলসিতে ভরে রেখে খেতাম।বাড়ি বর্ধমান,আছি মেদিনীপুরে ,যোগাযোগের মাধ্যম ছিল Post Card  । যাই হোক পরের দিন KB টেবিলে নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ  মনে হলো।কয়েকটা দাগ করার পর একটা ফারাজ এর ক্যালকুলেশন - খতিয়ানে অনেক share holder s  । আমার দুই সঙ্গী র সেই একই কৌশল - "স্যার আমরা অংশ পরিমাণ হিসাব করে বলছি,আপনি রেকর্ড করতে থাকুন ,কেবি তাড়াতাড়ি এগোবে ।" রায়তগণ কিন্তু আমাকে অভিজ্ঞ হিসাবেই বুঝল।এইভাবে চলতে থাকলো।এরমধ্যে হঠাৎ একজন বলে উঠল "এই ভুজা খাও কি সময় পাইরে যাচ্ছে,বাবুদের কখন খাওয়াবি?"। পরে বুঝলাম আমরা যেটা breakfast time বলি সেটা ওরা ভূজা(মুড়ি)খাওয়ার সময় বলে।সেদিন ওরা মুড়ি চানাচুর আর বাতাসা খাইয়েছিল,আর কুয়োর জল। আবার কাজ শুরু হলো, ওয়ারিশ ক্ষেত্রে অনেকেই মেয়ে বোন দের নাম চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।একজন তো তার জীবিত মা কেই মৃত বলে দিল। কয়েকটা বর্গা দার ও রেকর্ড হল,মালিকরা বাইরে থাকে।রেকর্ড করতে করতে মাঝে মাঝে GI book এর পাতা উল্টাতাম। ঐ দিনের একটা বিশেষ ঘটনার কথা বলি - একজন তাঁর নব্বই উর্ধ বাবাকে নিয়ে এসেছে ন কানুনগো সাহেবকে শুধু চোখে দেখবেন বলে ,আমি ওনাকে শ্রদ্ধা সহ নমস্কার জানালাম।উনি আগের RS মাপের সময়ও কেজিও সাহেবকে দেখেছিলেন । মন্তব্য করলেন আগের সাহেবরা একটু বয়স্ক ছিলেন,ইনি একদম অল্পবয়সী।তাইতো তখন আমার বয়স ২২ । যাই হোক সেদিনের মতো কাজ গুটিয়ে মেসে ফিরে ভাত খেয়ে বেরিয়ে পরলাম C O র উদ্দ্যেশে শালবনিতে। ঐ TS case। Circle Officer বিমলেন্দু সামন্ত ,খুবই ভালো মানুষ।দেখা হতেই কি বিশ্বনাথ কি মনে করে!কাগজের বান্ডিল টা বের করে বললাম স্যার TS case কিছুই বুঝতে পারছি না।তারপর উনি পাঁচ মিনিটেই বুঝিয়ে দিয়ে বললেন ভিতরের অত পাতা না পড়ে শুধু বাদী বিবাদী আর শেষ পাতায় judgement দেখে নিতে,সাথে সাথে কিভাবে KB করতে হবে সেটাও বুঝিয়ে দিলেন।চতুর্থ দিনে অনেকটাই confidence এসে গেল।মাঝখানে CO saheb একদিন ফিল্ড ভিজিট এ এলেন ।এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই প্রথম মৌজার KB র কাজ শেষ হল।তবে প্রথম দুদিনের নার্ভাসনেস এখনো মনে আছে।আবার ক্যাম্পের কথায় আসি - কিছু স্টাফ দেখতাম সকাল থেকেই  লুঙ্গি গেঞ্জি পরে মাটির বারান্দায় চাটাই পেতে মৌজা junch করছেন,কেউ কেবি করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইত্যাদি।     এদিকে এলাকায় young Gazetted officer দেখে যুবতীদের নজর পড়ে গেছে,আড়ালে আবডালে ওই মহলে বাচ্চা অফিসার হিসাবে designation দিয়ে ফেলেছে।অনেকে কথা বলার আছিলায় Attested করাতে আসতো দুতিন জন সাথী সহ।রাস্তা ঘাটে উসখুস করত,কিন্তু সরাসরি কথা বলার কারও সাহস হতো না। ওসবে আমল দিলে মুস্কিল ছিল।শালবনি তে দুটো term এ অনেকদিন ছিলাম।পেয়েছি ওখানকার মানুষ জনের কাছ থেকে সম্মান ও মর্যাদা।আমিও কাজের নিরিখে ওখানকার মানুষ জনের বিশেষ করে গরীবদের ন্যায্য অধিকার ও বিচার পাইয়ে দিয়েছি। পরবর্তী পর্যায়ে আবার অভিজ্ঞতার কথা বলব।
 

সংযোগসূত্র সার্ভে টিম

ফিল্ড ইন্সট্রাক্টরঃ বৈদ্যনাথ সেনগুপ্ত

ফিল্ডবুক রাইটারঃ সমীর ভট্টাচার্য

ফিল্ড সুপারভাইজারঃ রামচন্দ্র ঘোষ ও আশীষ সরকার

bottom of page